একটি পৌষ মেলার গল্প  

১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম


একটি পৌষ মেলার গল্প   

 

রাকিবুল ইসলাম,সংবাদকর্মী:
সূর্য যখন হেলে পড়েছে তখনও ধান খেতের আল ধরে মেলায় আসছে কেউ কেউ। ছোট নাতিটাকে নিয়ে মেহেরজান বেগম রওনা দিয়েছে বাড়ির পথে। হাতে থাকা পলিথিনের পুটলায় মাটি দিয়ে বানানো একটা গরু, সেটার সিং এর গুতা লেগে ছিড়ে গেছে পলিথিন। শুধু মেহেরজান নয়, এরকম শত শত মানুষের আনাগোনা তখন।কেউ বাড়ি ফিরছে, কেউ মেলায় আসছে।

 

বিলের ওইপাড় থেকে শোনা গেলো একটা চিৎকার, "ধইরা লাইছে রে! দুইডারে ধইরা লাইছে"। অমনি সবাই ছুটাছুটি শুরু করলো। আতংকের কিছু নেই, প্রতিবছরের নিত্য ঘটনা এটা। মেলার মাঠের পাশে বিল,বিলের ওইপাড়ের মাঠে বসে জুয়াখেলা। ৫০, ১০০,৩০০,৫০০ এবং ১০০০ টাকায় জুয়ার বোর্ড বসে। পুলিশ এসে বাগড়া করে প্রতিবারই। দুই একজনকে ধরে, মেলা কমিটি তাদেরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মেহেরজান বেগম ততক্ষণে নাতিটাকে নিয়ে বিল পাড় হয়েছে। এদিকে, জুয়া খেলা থেকে আটক হওয়া দুজনকে টেনে নেয়া হচ্ছে মেলার পাশ দিয়ে। উৎসুক জনতা ততক্ষণে জড়ো হয়েছে আটককৃত দুজনকে দেখার জন্য।

 

মাগরিবের আজান শেষ । কয়েকটা প্যান্ডেলে চলছে ঢোল, খোল, করতাল আর বাউল সুরের মূর্ছনা। বিচ্ছেদ, ফকিরি, মুর্শিদি বিভিন্ন গানে মুগ্ধ হয়ে শিল্পী ও কলাকুশলীদের গায়ে টাকা ছিটাচ্ছে গ্রামবাসী। টাকার পরিমাণ খুব বেশি না, ৫০ কিংবা ১০০ । কেউ বানিয়ে এনেছেন ফুলের মালা, সেই মালা পড়িয়ে দিচ্ছে প্রিয় সংগীত শিল্পীর গলায়।

 

ওহ, বলা হয়নি! এটি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সাহাপুর গ্রামের পৌষ মেলার গল্প। মাহমুদ শাহ ফকির নামে এক সাধকের স্মরণে প্রতি বছর বসে এই মেলা। এবছর মেলা ৩ দিন, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি। গ্রামবাসীর বিশ্বাস সাধক মাহমুদ শাহ ফকির খড়ম (কাঠের জুতা) পায়ে দিয়ে বিলের পানির ওপর দিয়ে হাটতেন। তার মৃত্যুর পর প্রায় ৬ শত বছর ধরে প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার মাজার প্রাঙ্গনে বসে এই মেলা।

 

গেরস্থ আইনউদ্দিন যখন তার মেঝো ছেলেটাকে প্লাস্টিকের ৩ চাকা ওয়ালা খেলনা গাড়ি কিনে দেয়ায় ব্যস্ত তখন মাঝ বয়সী সাজেদা বেগম ছোট একটা খাসি নিয়ে হাজির মাজারে। সাজেদার মত অনেকেই এসেছেন, কারও হাতে মুরগী, লাউ, মিষ্টি কুমড়া। সকলেরই বিশ্বাস, সাধক খুশি হলে দূর হবে সকল মুশকিল। গ্রামবাসীদের এই বিশ্বাস আমার কাছে দারুণ লাগে। সচেতনতার নামে তাদের বিশ্বাস ভাঙতে ইচ্ছা করেনা। প্রায় ৬ শত বছর ধরে যেমন চলছে তেমনই চলুক..


বিভাগ : মতামত


এই বিভাগের আরও