রায়পুরায় চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় সাংবাদিক আহত

২৪ এপ্রিল ২০২০, ০৮:০০ পিএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৭ এএম


রায়পুরায় চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় সাংবাদিক আহত
হামলার শিকার সাংবাদিক সজল ভূঁইয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন একজন সাংবাদিক। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের নেতৃত্বে তার কর্মী-সমর্থকরা ওই সাংবাদিকের ওপর হামলা করেন।  বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে এই  হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার সজল ভূঁইয়া নামের ওই সাংবাদিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এসএ টিভির নরসিংদী প্রতিনিধি। ঘটনার পরপর স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত তিনি হাসপাতালটির পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাল চুরি ও ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন করতে বৃহস্পতিবার আমিরগঞ্জে আসেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়ান টিভির সিনিয়র রিপোর্টার বাতেন বিপ্লব। তার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ওই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন এসএ টিভির নরসিংদী প্রতিনিধি সজল ভূঁইয়া। তথ্য সংগ্রহ শেষে অনিয়মের বিষয়ে আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের বক্তব্য নিতে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

সাংবাদিক সজল ভূঁইয়ার অভিযোগ, চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ চাল না দেওয়া ও আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ আছে স্থানীয় লোকজনের। এসব তথ্যের অনুসন্ধান করতে বাতেন বিপ্লবের সাথে রায়পুরার আমিরগঞ্জে গিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে আমাকে দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন চেয়ারম্যান নাসির। কারণ এর আগেও তার বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতিবেদন করায় তিনি আমার প্রতি ক্ষুব্ধ।


এশিয়ান টিভির সিনিয়র রিপোর্টার বাতেন বিপ্লব জানান, প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি বক্তব্য নেওয়ার জন্য স্থানীয় ওই ইউপি চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে কল করলে তিনি আমাদেরকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর আমার সাথে সজল ভূঁইয়াকে দেখে তিনি বলেন, এই হালার পুতে আগেও আমার বিরুদ্ধে কয়েকটা নিউজ করছে। আগে তারে দেখতে হবে। এরপরই হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় জ্ঞান হারানো সহকর্মীর জন্য অনুনয় বিনয় করলে আমাকেও হুমকি দেন ওই চেয়ারম্যান৷ হামলায় অংশ নেওয়া উত্তেজিত ব্যক্তিদের ঠেকাতে গেলে আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য ক্যামেরা ফিরিয়ে দেন তারা।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এশিয়ান টিভির ওই সাংবাদিকের সাথে সজল ভূঁইয়াও আছেন জানার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের নির্দেশে ১০/১২ জন কর্মী-সমর্থক মিলে তাকে মাইক্রোবাস থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে এনে সবার সামনে মারধর করতে থাকে। এ সময় লাঠি, বৈঠা ও রড দিয়ে তার নাকে-মুখে-বুকে-পিঠে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। এই হামলায় অংশ নেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈমুল ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলামসহ ১০/১২ জন ব্যক্তি। এ সময় ঘটনাস্থলে অন্তত ৫০ জন স্থানীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। আহত ওই সাংবাদিককে হাসপাতালে নেওয়ার পর ওই চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার কর্মীরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়।


নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ আমীরুল হক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাংবাদিক সজল ভূঁইয়াকে আমাদের হাসপাতালে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তার নাকে-মুখে-বুকে-পিঠে মারধর করায় রক্তাক্ত জখম তৈরি হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

অভিযুক্ত আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান মুঠোফোনে জানান, ঘটনার সময় আমরা আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলাম। ওই সাংবাদিকই প্রথম আমাদের ওপর হামলা করে। পরে আমরা প্রতিহত করি। আমাদেরও কয়েকজন লোক হাসপাতালে ভর্তি আছে। তবে কাকে, কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, এই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে ঘটনার সাথে জড়িতদের বাড়িঘরে বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযান চালিয়েছি আমরা। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানসহ জড়িতরা সবাই পলাতক থাকায় তাদের আটক করা যায়নি।

জানতে চাইলে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মাখন দাস জানান, আমাদের একজন সাংবাদিকের ওপর এমন হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই বিষয়ে শনিবার সকালে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের নিয়ে মিটিং ডাকা হয়েছে। ওই মিটিংয়ে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।  



এই বিভাগের আরও