নরসিংদীতে তীব্র গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিফসল

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম


নরসিংদীতে তীব্র গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিফসল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে তীব্র গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিফসল। টানা রোদে নেতিয়ে পড়ছে ফসলের ক্ষেত, ঝরে পড়ছে লিচু, আম, লটকনসহ অপরিপক্ক বিভিন্ন মৌসুমী ফল। সেচ দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না আবাদী ফসল। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়ে ক্ষতির মুখে পড়বেন জানান কৃষকরা।

খরতাপের ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সেচ দেয়াসহ কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টানা গরমের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাকরুল, বেগুন, শসা, লাউ, চিচিংগা, করলা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, ডাটাসহ বিভিন্ন শাকসবজির জমি। প্রচন্ড রোদের কারণে সবজির জমি শুকিয়ে যাওয়ায় নেতিয়ে পড়ছে সবজিগাছ ও পাতা, ঝড়ে পড়ছে ফুল ও অপরিপক্ক ফসল। সেচ দিয়ে ফসলের ক্ষতি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি না হলে এবং টানা দাবদাহ চলতে থাকলে শাকসবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শংকা করছেন কৃষকরা।  

এছাড়া রোদের প্রভাবে আম, জাম, লিচু, লটকন, কাঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ক্ষতি হচ্ছে। যথাসময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়াসহ প্রচন্ড খরতাপে সবধরনের মৌসুমী ফল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা। একইভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পানের বরজ।  

বেলাব উপজেলার ধুকুন্দি গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেগুন, শসাসহ বিভিন্ন সবজির মৌসুম চলছে। এসব ফসলে প্রয়োজনীয় পানিসহ নিয়মিত পরিচর্যার দরকার পড়ে। এবার প্রচন্ড খরতাপের কারণে জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। এছাড়া রোদে পুড়ে নেতিয়ে পড়ছে এসব ফসলের জমি।

মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের মনতলা গ্রামের পানচাষী এখলাস ও মোখলেস দুই ভাই মিলে প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে পানের চাষ করেন। তারা বলেন, তাদের পানের ফলন ভাল ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে অনেক পান ই ঝরে গেছে। এখন আবার প্রচন্ড তাপদাহ ও খরায় পান পাতা লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে। আগে প্রতিদিন তারা ৫ হাজার টাকার পান প্রতিদিন বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারতেন। এখন এটা দুই হাজারের নিচে নেমে এসেছে। শিলাবৃষ্টির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় যখন তারা ক্লান্ত ঠিক সেই সময়ে প্রচন্ড খরা ও তাপদাহের কারণে এখন তারা দ্বিগুন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

উপজেলার শুকুন্দী ইউনিয়নের কৃষক ওমর ফারুক জানান, প্রচন্ড তাপদাহের কারণে তার আবাদকৃত দুই বিঘা ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অনেক ধানের গাছ পুড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

রায়পুরা উপজেলার মরজাল গ্রামের লটকনচাষি কাজী কামাল হোসেন জানান, লটকন গাছে ফলন এসেছে। প্রচন্ড গরমে ঝরে যাচ্ছে। এছাড়া লোডশেডিং এর কারণে সেচ দেয়া যাচ্ছে না।

একই এলাকার ফল চাষি কামরুল ইসলাম বলেন, লটকন, লিচু ও আম গাছের ফুলসহ অপরিপক্ক ফসল ঝরে পড়ছে। সেচ দিয়েও আটকানো যাচ্ছে না। তাপ না কমলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা।’

উত্তর বাখর নগর গ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টির অভাবে সবজি খেত শুকিয়ে পড়ছে। গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। গাছ মরে যাওয়ার ভয়ে পানিও দিচ্ছি না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নরসিংদীর উপ-পরিচালক মো: আজিজুর রহমান বলেন, প্রচন্ড দাবদাহের ক্ষতি হতে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল, মৌসুমী ফল রক্ষার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এসময়ে শাকসবজি ও ধানের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। বিশেষ করে ধানের জমিতে পানি জমা রাখতে হবে। সবজির চারা দিনের বেলা পলিথিন দিয়ে না ঢেকে রেখে অন্যান্য ধরনের যেমন বস্তা, চট বা কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে তাপ না লাগে। শুধুমাত্র বৃষ্টি/শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনার সময় পলিথিন দিয়ে সবজির চারা ঢেকে রাখতে হবে।

চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৬ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। সবজির আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৩ শত হেক্টর। এছাড়া খরিপ মৌসুমে আরও ৭ হাজার ১ শত হেক্টর শাকসবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৭ শত ৩৫ হেক্টর বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।



এই বিভাগের আরও