আলোকবালীতে বিএনপি নেতার অবৈধ চুম্বক ড্রেজারে বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে কৃষিজমি

২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ০৬:১১ পিএম


আলোকবালীতে বিএনপি নেতার অবৈধ চুম্বক ড্রেজারে বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে কৃষিজমি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর মেঘনা নদীতে আব্দুল কাইয়ুম মিয়া নামে এক বিএনপি নেতা কর্তৃক অবৈধ চুম্বক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের কারণে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত একর কৃষিজমি। বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের ১৩৯ জন কৃষক ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়ার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করে এ অভিযোগে করেন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধূরী।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়া ১৮ থেকে ২০ টি চুম্বক ড্রেজার দিয়ে ৩ মাস ধরে অবৈধভাবে নদী তীরে বালু তুলছেন। এতে আলোকবালীর গৌরীপুরা চরের কৃষি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৩৯ জন কৃষকের কয়েকশত একর কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

অভিযোগ দিতে আসা ভুক্তভোগীদের মধ্যে বাখরনগর গ্রামের দুদুল মিয়া (৫০), মুছা মিয়া (৬২), বকশালীপুর গ্রামের হাবিজ উদ্দিন (৬৫) ও বীরগাঁও গ্রামের ইলিয়াস মিয়া (৪৫) বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন দফায় দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযুক্তদের জরিমানা করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়ে উল্টো গতি বাড়ে। এছাড়া প্রশাসন অভিযানে যাওয়ার আগেই বালু উত্তোলনকারীরা খবর পেয়ে যায়।

কৃষকদের অভিযোগ, এই অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে তাদের ফসলী জমি ধ্বংস হয়ে জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে এবং পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। চরাঞ্চলের কৃষিজমি ও বাড়িঘর ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার জন্য কৃষকদের আকুতি কেউ শোনেন না বলে জানান তারা। বালু উত্তোলনের মূল হোতা বিএনপি নেতা কাইয়ুম মিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রশাসনে অভিযোগ করেও কোন ফল হয় না, যা রহস্যজনক। 

অভিযোগে বলা হয়, বিএনপির ওই নেতা কাইয়ুম মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ একাধিক অস্ত্র মামলা রয়েছে। অবৈধভাবে বালু তোলাসহ তার যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই কৃষকদের ভয়ভীতি দেখানো হয় । গত ৯ মার্চ ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিতে যাওয়ার পথে কৃষকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরণ করে হামলা চালানো হয়, এতে চারজন আহত হন।

ভুক্তভোগী কৃষক দুদুল মিয়া বলেন, আমার ২৫৪ শতাংশ জমি কেটে নিয়ে গেছে কাইয়ুম। জমিতে ধান চাষ করতাম, আমাদের চরের দুই পাশে নদী হওয়ায় প্রতিবছর জমির পরিমাণ বৃদ্দি পায়। প্রতিটি কৃষকের জমিই বৃদ্দি পাচ্ছে। আর এসব জমি অবৈধ চুম্বক ড্রেজার ব্যবহার করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতা কাইয়ুম মিয়া। প্রতিবাদ করলে হামলা ও নির্যাতন করা হয়।

ভুক্তভোগী কৃষক ইলিয়াস মিয়া (৪৫) বলেন," তার রাজনৈতিক প্রভাবে আমরা অসহায়। জেলা প্রশাসকের কাছে ইতিপূর্বে অভিযোগ দিয়েছি এবং তারা কাইয়ুমকে জরিমানাও করেছেন কিন্তু কাইয়ুম আরও বেপরোয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল কাইয়ুমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব দীপক কুমার বর্মণ প্রিন্স বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ কৃষক বাঁচলেই, বাঁচবে দেশ। কৃষকদের পাশে থাকতে কৃষকদল সারাদেশে কৃষক সমাবেশ আয়োজন করছে। যে বা যারা কৃষকদের ক্ষতি করবেন, তাদের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান থাকবে। দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি সুপারিশ করবো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধূরী বললেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবারও ব্যবস্থা নেয়া হবে।



এই বিভাগের আরও