নরসিংদীতে তিন দপ্তর কর্তৃক বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশ দূষণ করেই চলছে খামার

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৮ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ০২:২৫ এএম


নরসিংদীতে তিন দপ্তর কর্তৃক বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশ দূষণ করেই চলছে খামার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহল্লায় 'আরিয়ান পোল্ট্রি' নামের একটি খামার বন্ধের নির্দেশনার রায় দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ৩টি দপ্তর। কিন্তু এসব দপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করেই চলছে খামারটি, এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রচণ্ড তাপমাত্রায় খামার থেকে দুর্গন্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, খামারটি সরিয়ে নেয়ার রায় হবার প্রায় ৮ মাস অতিক্রম হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে খামারের দুর্গন্ধে বাসা বাড়ি ছেড়ে দেয়া ভুক্তভোগীরা তাদের বাড়ীতে ফিরতে পারছেন না।

ভুক্তভোগীরা জানান, রায় বাস্তবায়ন দূরের কথা উল্টো অভিযোগকারীদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। হুমকি ও মারধরের ঘটনায় নরসিংদী সদর থানায় পৃথক ৩ টি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আবার এসব অভিযোগ প্রত্যাহার করতেও বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে খামারটির মালিকের বিরুদ্ধে।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামও লিখিতভাবে নরসিংদী জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরকে খামারটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেন।

জানা গেছে, খামার থেকে ছড়িয়ে পড়া মুরগীর বিষ্ঠার তীব্র দুর্গন্ধে  কয়েকটি পরিবার চার বছর ধরে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। এছাড়াও এলাকায় খামার মালিকের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বীরপুর মহল্লাটিতে প্রায় ১৫ হাজার নাগরিক বসবাস করছেন।

খামারটির পাশের জমি তার কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয়রা। খামারটির দক্ষিণ পাশের শামসুদ্দিন খোকনের ১০.৫ শতাংশ জমিও দখল করেছেন অভিযুক্ত আরিয়ান পোল্ট্রি খামারটির মালিক সালাহউদ্দিন। জমি দখলের ঘটনায় গত সেপ্টেম্বরে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী এবং পাশাপাশি নরসিংদীর দেওয়ানি আদালতে একটি মামলাও চলমান।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর আরিয়ান পোল্ট্রি খামারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার ইনফোর্সমেন্ট শাখা। একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর নরসিংদী পৌরসভার শালিসি আদালত ১ মাসের মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে খামারটি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু। একই বছরের ৮ অক্টোবর নরসিংদী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট  মেহেদী হাসান কাউছার খামারটি তিন দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি নরসিংদী জেলা প্রাণী সম্পদ অধিপ্তরও ছাড়পত্র নবায়ন স্থগিত করে দেয়।

ভুক্তভোগী সাহিদা আক্তার (৪৮) বলেন, "মুরগীর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে চার বছর ধরে পরিবার নিয়ে বাসায় থাকতে পারছি না। কখনও মেয়ের শুশুড়ের বাসায়, আবার কখনও অন্য কোনো আত্মীয় স্বজনের বাসায় থেকে দিন কাটাতে হচ্ছে। আমার সেই রকম আয়ও নেই, যা দিয়ে শহরে ভাড়া বাসা নিয়ে থাকব। আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করলেও রায় হয় কিন্তু খামারটি সরিয়ে নিচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় খামারের মালিককে কিছু বলতেও পারছি না।"

ভুক্তভোগী মাহমুদা বেগম শিউলি (৪৩) বলেন, "রায় হলেও রায়ের বাস্তবায়ন নেই। বরং উল্টো ঝামেলায় পড়ি, দিনদিন বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। তার কাছে আমরা অসহায়। জায়গা ছেড়ে দিতে খামারটির দুর্গন্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।"

অভিযুক্ত আরিয়ান পোল্ট্রি খামারের মালিক সালাউদ্দিন বলেন, "আল্লাহ্র উপর ভরসা নিয়ে খামারটি চালাচ্ছি। বিভিন্ন দপ্তরে কাগজপত্র জমা দেয়া আছে। তারা নবায়ন না দিলে আমি কি করতে পারি? প্রাণি সম্পদ দপ্তরে ২০২৪ সালের নবায়ন আছে। আমি কাউকে হুমকি দেইনি। আর তারা ইচ্ছে করে বাড়ী ছেড়ে দিলে, আমি কি করতে পারি? আমারও ব্যবসা করার অধিকার রয়েছে।

নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ নাজমুল হুদা বলেন, " আমাদের পৃথক তদন্ত কমিটি খামারটির বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণ ও স্থানীয়দের হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। গত ১ বছর ধরে খামারটির ছাড়পত্র নবায়ন স্থগিত করা হয়েছে। আমরা একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। অচিরেই আমরা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেব।

নরসিংদী জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, "আমাদের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি আরিয়ান পোল্ট্রি খামারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তার খামারের উৎপাদন এ বছর থেকে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন করে উৎপাদনে যেতে পারবে না।"

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, "আরিয়ান পোল্ট্রি খামারের দূষণের বিষয়ে আমরা অবহিত আছি। আমাদের তদন্ত টিমও খামারটির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পেয়েছেন। এটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। অচিরেই খামারটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।"



এই বিভাগের আরও