বেলাবতে বাঁশের সাঁকোতে দুই উপজেলার ১৫ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ

০৭ মে ২০২০, ০৪:৫৯ পিএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ এএম


বেলাবতে বাঁশের সাঁকোতে দুই উপজেলার ১৫ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ
স্থানীয়দের উদ্যোগে তৈরি বাঁশের সাঁকো

শেখ আব্দুল জলিল:
নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই উপজেলার ১৫ গ্রামের মানুষ। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের আওয়ালীকান্দা ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকোই এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা। বাঁশের সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হওয়াসহ ঘটছে দুর্ঘটনা। একটি সেতু নির্মাণ হলে দুই উপজেলার ১৫ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
 
সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু না থাকায় বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ, আওয়ালীকান্দা, দীঘলদীকান্দা, জহুরিয়াকান্দা, কাশিমনগর, তালতলা গ্রাম এবং কুলিয়ারচর উপজেলার আলিনগর, নলবাইদ, ফরিদপুর, নাপিতেরচর, সালুয়া গ্রামসহ ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী ১৫ গ্রামের লাখো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। ব্রহ্মপুত্র নদের এক পাড়ে বেলাব উপজেলার আওয়ালীকান্দা গ্রাম অন্যপাড়ে কুলিয়ারচর উপজেলার আলিনগর গ্রাম। দীর্ঘদিনের দাবির পরও এখানে সেতু তৈরি না হওয়ায় স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি সাঁকো তৈরি করে নদ পারাপার হচ্ছেন মানুষ। স্থানীয় যুবসমাজ স্থানীয়দের নিকট থেকে বাঁশ ও অর্থ সহায়তা নিয়ে ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন। একই সাথে স্থানীয়দের অর্থায়নে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাকোর সাথে একটি সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হয়। এখন অর্থের অভাবে বাঁশের সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের নদ পারাপার করতে হচ্ছে। এতে মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে বাঁশের সাঁকোটি। পণ্য পরিবহনসহ যাতায়াত সমস্যার কারণে পিছিয়ে পড়েছে এতদাঞ্চলের জীবনযাত্রার মান। এলাকাবাসির দাবি ব্রহ্মপুত্র নদে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে ১৫ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।

বাঁশের সাঁকো নির্মাতাদের একজন আকিবুল হাসান বলেন, প্রায় দুই বছর আগে সকলের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এলাকার যুবকদের নিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরী করি। বর্তমানে অর্থকষ্টে সেতুটি মেরামত করতে পারছি না।

স্থানীয় শিক্ষার্থী ফরহাদ রেজা, শাহীন, আবু জাফর, সুমাইয়া, রিমা আক্তার বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন নদ পারাপার হয়ে স্কুল কলেজে যেতে হচ্ছে। প্রায় সময়ই পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।

কুলিয়ারচরের ফরিদপুর ইউনিয়ন আঃ হামিদ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ কাদির বলেন, আওয়ালীকান্দা গ্রাম হতে শতাধিক শিক্ষার্থী বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদ পাড়ি দিয়ে আমার স্কুলে আসে। এতে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। এখানে সেতু নির্মাণ হলে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীই নয় সকল শ্রেণিপেশার মানুষের উপকার হবে। পাল্টে যাবে এলাকার আর্থসামাজিক চিত্র।

ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্ম্দ শাহ আলম নরসিংদী টাইমসকে বলেন, বাঁশের সাঁকোটি যারা তৈরী করেছেন তারা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন ও কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাঁড়ের লক্ষাধিক জনগনের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এখানে একটি সেতু নির্মাণ খুবই প্রয়োজন।

বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তুফা গোলাপ নরসিংদী টাইমসকে বলেন, বাঁশের সাঁকোটি যেদিক দিয়ে তৈরী করা হয়েছে এর পাশেই একটি খেয়াঘাট আছে। সেখানে যদি একটি সেতু নির্মাণ করা হয় তাহলে কমপক্ষে ১৫ গ্রামবাসীর উপকারে আসবে। আমি এখানে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

যোগাযোগ করা হলে বেলাব উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে শিক্ষার্থী সহ সাধারণ মানুষ যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদ পারাপার হয় এটা দেখে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। এখানে যাতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে আমি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো।



এই বিভাগের আরও