বেলাবতে ৩০ বছরের পুরাতন কবরকে ঘিরে নতুন মাজার, আস্তানা ভেঙ্গে দিলো স্থানীয়রা

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৫:৩৪ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম


বেলাবতে ৩০ বছরের পুরাতন কবরকে ঘিরে নতুন মাজার, আস্তানা ভেঙ্গে দিলো স্থানীয়রা

বেলাব প্রতিনিধি:
নরসিংদীর বেলাবতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস ‘লালসালুর’ মতই প্রায় ৩০ বছর আগের একটি পুরাতন কবরকে নতুন করে মাজার বানিয়ে ভন্ডামির অভিযোগে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় যুবসমাজ। প্রায় এক মাস আগে স্থানীয় তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ নামের এক ব্যক্তি ওই কবরটিকে মাজার বানিয়ে আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন। পরে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামের যুবসমাজ মাজারটির আস্তানা সরিয়ে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী আব্দুল্লানগর গ্রামের একটি পুরাতন মাজারের খাদেম ছিলেন একই গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ (সারাবছর খালি গায়ে থাকার কারণে উদাম শাহ নামে পরিচিত)। প্রায় এক মাস আগে ওই মাজার কমিটির সাথে মনোমালিন্যের কারণে খাদেম উদাম শাহ সেখান থেকে বিতাড়িত হন। বিতাড়িত হবার পর তিনি চলে আসেন পার্শ্ববর্তী লাখপুর গ্রামের পিপঁড়াটুলী মসজিদের নিকটে। সেখানে লাখপুর গ্রামের কতিপয় লোকের সাথে আলোচনা ও সমঝোতা করে সাধন ভজনের অজুহাতে ৩০ বছরের পুরাতন হাছেন আলীর কবরকে পাকাকরণ করে মাজার তৈরি করেন এবং তার পাশেই টিনসেডের একটি আস্তানা তৈরি করেন। ওই আস্তানা থেকে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন রোগ সারানোর জন্য পানি পড়া দিতে থাকেন উদাম শাহ। এভাবে প্রায় ১৫ দিন অতিক্রম হলে এলাকার কতিপয় যুবসমাজ ভন্ডামির অভিযোগে সম্মিলিত হয়ে আস্তানাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।

এলাকাবাসী আরও জানান, আব্দুল্লাহনগর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে তাজুল ইসলাম চরআমলাব গ্রামের মৃত সুফি ফজলুল হক ফালু শাহের ভক্ত। ১২ মাসই খালি গায়ে থাকার কারণে তাকে অনেকেই উদাম শাহ নামে ডাকেন। সে আব্দুল্লানগর গ্রামের একটি মাজারের খাদেম থাকাবস্থায় সেখানে ভক্ত ও শিষ্যদের কাছে অতিরিক্ত টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মাজার কমিটির সাথে তার দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এবং সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে পুরাতন কবরে নতুন আস্তানা গড়ে তোলেন।

সরেজমিন লাখপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে মৃত হাছেন আলী ওরফে হাছুইন্না ফকিরের কবরকে মাজারের মত করে পাকাকরণ করা হয় এবং এতে লাল গামছা জড়িয়ে রাখা হয়েছে। মাজারের পাশেই ছড়ানো ছিটানো আগরবাতি, ভক্ত ও সাধারণ মানুষকে পানি পড়া দেয়ার ভাঙ্গা মাটির কলস, কিছু শুকনো ফুলের অংশ ও পাশেই টিন দিয়ে তৈরী করা ভেঙ্গে ফেলা উদাম শাহের আস্তানা।
এ যেন অনেকটা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস ‘লালসালুর’ মতই ঘটনা। আর এতে মজিদ চরিত্রের মত চরিত্রে রয়েছেন তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন গ্রামের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্ম ব্যবসার উদ্দেশ্যেই তৈরী করা হয়েছিল মাজারটি।

মৃত হাসান আলী ওরফে হাছুইন্না এর ছেলে জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার পিতা জীবদ্দশায় ফকিরী লাইনে জীবনযাপন করেছেন। উনি মারা যাবার পর (প্রায় ৩০ বছর) প্রায় ছয় বছর আগে কবরটি আমরা মাজারের মত করে পাকা করি। এ কবরের পাশে সাধন করার উদ্দেশ্যে আস্তানা গড়েন তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ।

তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ এর চাচা মোঃ আউয়াল বলেন, মরহুম হাসান আলী ফকির একজন সাধক ছিলেন। উনার কবরের পাশেই তাজুল ইসলাম আস্তানা করেছে সাধন করার উদ্দেশ্যে। আসলে ব্যবসা করার কোন উদ্দেশ্য ছিল না।

বেলাব উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও পার্শ¦বর্তী উজিলাব গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন নীলু বলেন, তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ আমাদের উজিলাব বাজারে দীর্ঘদিন পাহারাদার হিসেবে চাকুরি করেছেন। সাধনের নামে সে ১২ মাস খালী শরীরে থাকে। কিন্তু একটি পুরাতন কবরকে মাজার বানানো ভন্ডামী ছাড়া কিছুই না।

অভিযুক্ত তাজুল ইসলাম ওরফে উদাম শাহ বলেন, আমি সাধনের জন্যই এই জায়গাটিতে আস্তানা করেছিলাম। পুরাতন কবরটি একজন ধার্মিক লোকের। তাই আমি উক্ত মাজারে বাতি দিয়েছি, পাশের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েছি। আমি পাগল মানুষ কারো ক্ষতি করিনি। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হাসান ভূঁইয়াসহ এলাকার কিছু ছেলেরা মিলে আমার আস্তানা অন্যায়ভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হাসান ভূঁইয়া বলেন, উদাম শাহের আস্তানা কে ভেঙ্গেছে আমি জানি না। কেউ যদি আমার কথা বলে থাকেন তাহলে ভুল বলেছেন।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ফখরুউদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, রাতারাতি একটি পুরাতন কবরকে মাজার বানানো ভন্ডামী ছাড়া কিছুই না। তবে এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।

 

 



এই বিভাগের আরও