মনোহরদীতে পান চাষে ঘুরেছে ভাগ্যের চাকা

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:২৯ পিএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পিএম


মনোহরদীতে পান চাষে ঘুরেছে ভাগ্যের চাকা
Business_Agriculture

“আসুন করি পান চাষ – সুখে কাটাই বার মাস”। নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল পান। পান চাষে সাফল্যও পেয়েছেন তারা। মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা, খিদিরপুর দুটি ইউনিয়নের সকল গ্রামেই পানের বরজ আছে ৯৫% মানুষের।

এছাড়াও চালাকচর, অর্জুনচর, দৌলতপুর ইউনিয়নেও কমবেশি পানের চাষ হয়। চাকুরী বা ব্যবসা করছেন সাথে একটু পানের বরজ থাকলে মন্দ কি? পরিবারে বাড়তি আয়ের পথ সুগম হলো। অনেক মহিলারাও কাজ করে চাষ করতে পারেন পানের। বাংলাদেশে পানের চাহিদা অনেক। ঔষধি গাছ হিসেবে পানের চাহিদা ব্যাপক।

এছাড়াও অনেকে আবার খাবার পরে একটু পান- সুপারি না খেলে মনেহয় খাবারটাই অপূর্ণ থেকে গেল।মনোহরদী উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পান চাষ বাড়ছে। এ পান চাষ করে ঘুরেছে অনেক মিটিয়ে উৎপাদনের ৮৫ ভাগ পান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন পান চাষে।


১০ বছর পূর্ব থেকে বর্তমানে উপজেলায় পানের আবাদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এলাকায় পানের বরজকে টাকার ব্যাংক বলা হয়। কারণ ভালো একটি পানের বরজ যেন যেন আল্লাহপাকের দেয়া টাকার অফুরন্ত ভান্ডার। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৩০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৫ টন পানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে উপজেলার ২ টি ইউনিয়নের ৯৫% পরিবার এই পান চাষের সঙ্গে জড়িত।

পান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে দোঁয়াশ মাটিতে আগাছা পরিষ্কার করে তিনবার চাষ দিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ কেজি ফসফেট, ১ কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম লিজেন্ট মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে দেড় ফুট দূরত্বে সারি বেঁধে মাটি উঁচু করে ১ ফুট দূরত্বে পানের গাছ লাগিয়ে দিতে হয়।

প্রতিটি পানের লতা থেকে ১২-১৫টি চারা লাগানো যায় এবং বাঁশের শলা, পাটকাঠি, জিআই তার, কাশবন, সুপারি পাতা ও সুতা দিয়ে পানের বরজ বানাতে হয়। জমির চারদিকে বাঁশ ও সুপারি পাতা দিয়ে বেড়া দিতে হয় এবং জমির উপরে জিআই তার ও কাশবন দিয়ে চাল বানানো হয়। মাটি থেকে পানের লতা যখন ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হয় তখন পাশে ১টি ৫-৬ ফুট লম্বা বাঁশ বা পাটকাঠি পুঁতে দেয়া হয়।

পানের লতাটি ধীরে ধীরে বড় হয় এবং কাঠি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ৫-৬ মাস পর থেকে পান বিক্রির উপযোগী হয় এবং এরপর প্রতি ৮-১০ দিন পরপর পান বাজারে নেয়া যায়। ১টি বরজ থেকে সর্বনিম্ন ১৫ বছর একাধারে পান পাওয়া যায়। যদি পানের ফাপ পচা রোগ না হয় তাহলে বরজটি ২০-৩০ বছর থাকে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পানের ফাপ পচা রোগ হয়। এটি পানের সবচেয়ে বড় রোগ।

এ রোগ দমনে ফ্লোরি, এডমা ও কাফেডার- এ তিনটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। শীতের সময় একপ্রকার বিষাক্ত কুয়াশা পান গাছে লাগলে পান পাতা ঝরে যায়। এতে চাষিদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এটা প্রতিরোধে কোনো ওষুধ না থাকায় বিপাকে পড়েন চাষিরা। অনেক চাষি কুয়াশা ঠেকানোর জন্য বরজের চারপাশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়।

পানচাষি গোলাম মোস্তফা খসরু মাস্টার জানান, এই উপজেলায় দুই প্রকার পান চাষ হয়, গয়াল সুর ও লালডিঙ্গি তবে কিছু মিষ্টি পান এবং ছাঁচি পানও পাওয়া যায়।


উপজেলায় মোট চাষের ৮০ ভাগই গয়ালসুর পান। একই কথা জানালেন আরেক কৃষক। তিনি বলেন- পান চাষ করেই আমাদের সংসার চলে। আমি এবং আমার পরিবার দুজনেই বরজে কাজ করি। ২৭ বছর ধরে পানের বরজ করে আসছি। বর্তমানে ২৩ শতক জমিতে পানের বরজ রয়েছে।

প্রতিহাটে সপ্তাহে (দুই দিন) ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পান বিক্রি করি। এখান থেকেই আয় করে সংসারের খরচসহ সন্তানদের লেখাপড়া করানো হয়। গ্রাম কিংবা শহরে অতিথি আপ্যায়নে এ পানের এখনো চাহিদা রয়েছে। চুন ছাড়া পানপাতার রস আর কাঁচা সুপারির রস হার্টের উপকারিতা ছাড়াও ছাঁচি পানের রস দিয়ে যৌনরোগের ওষুধ তৈরি করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গ্রামের কবিরাজরা বেশ নাম রেখেছে।

বিভিন্ন স্থান হতে পান কিনতে আসা এক পান ব্যবসায়ী বলেন, এখানকার পান অনেক পুরু ও সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের লাভও হয় ভালো। মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ আয়েশা আক্তার, লেবুতলা ইউনিয়নের উপসহকারী কর্মকর্তা কৃষিবীদ মো: ফারুক হোসেন ও রেবা সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, মনোহরদীর মাটি পান চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত হওয়ায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির পানের চাষ করে চাষিরা। তবে গয়াসুর ও লাল ডিঙ্গি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অনেক পানের চাষ করেছে।

প্রতিবছর পানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সকল প্রকার পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, সরকারের নজরদারি থাকলে পান চাষে আগ্রহী এসব পরিবার আর্থিক লাভবানের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন পান চাষিরা। এবং অনেকে সফলতার মুখ ও দেখেছেন বলে জানান তারা।



এই বিভাগের আরও