সৌমিত্রের বিদায় বেলা

১৬ নভেম্বর ২০২০, ০২:২৭ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম


সৌমিত্রের বিদায় বেলা

বিনোদন ডেস্কঃ

শ্মশানঘাটে বুক খাঁ খাঁ করা এক দৃশ্য।ফুলের স্তূপে ঘুমিয়ে আছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শেষবারের মতো তাঁর কপাল আর গাল ছুঁয়ে আদর করে দিলেন মেয়ে পৌলমী বোস। শেষবারের মতো চুমু দিলেন বাবার গালে আর কপালে। এবার তাঁর পাড়ি জমানোর পালা । ৮৫ বছরের একজন মানুষ কতটা সচল ও কতটা ঋদ্ধ হতে পারে, সৌমিত্রর শেষ বিদায়ে মানুষের মিছিলে তাকালে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মহামারিও ঠেকাতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে। মিছিলের সামনে ছিলেন ভারতের ওই রাজ্যের স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবীন্দ্রসদন থেকে কেওড়াতলা।প্রতিটি বাড়ির সামনে মানুষ। শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের ‘অপু’, তাঁদের ‘ফেলুদা’ শেষবারের মতো প্রদক্ষিণ করবে সেই পথ। এসব পথ বেয়ে বছরের পর বছর সৌমিত্র গেছেন মঞ্চে, সিনেমার শুটিং এ ও আবৃত্তির আসরে। এসব করে নিজে আনন্দ পেয়েছেন, মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন সীমাহীন ভালোবাসা এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়েছেন বিপুল সম্মান।

আবৃত্তি করতে ভালোবাসতেন সৌমিত্র, ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ বহু মানুষকে বহু চিঠি লিখেছিলেন। সেসবের প্রায় ১ হাজার ৪১৬টি চিঠি পাঠ করেছেন সৌমিত্র।সেই সৌমিত্রর শেষ যাত্রায়ও সঙ্গী হয়েছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ’। শিল্পীরা গাইছিলেন ‘তোমারও অসীমে’, ‘এই কথাটি মনে রেখো’, ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। গানের ফাঁকে ফাঁকে বাচিকশিল্পী আবৃত্তি করছিলেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা।

বন্ধুবৎসল মানুষ ছিলেন সৌমিত্র। আড্ডায় তাঁকে পেয়ে যেকোনো মানুষ আলোকিত হতেন। ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতে তাঁর সহশিল্পী শর্মিলা ঠাকুর আজ বলছিলেন সে কথা। এত পড়াশোনা করা মানুষ তিনি, যে তাঁর সঙ্গে আড্ডায় বসলে অনেক কিছু শেখা যেত। শিল্পকলা, রাজনীতি, দর্শনসহ এমন কোনো বিষয় নেই, যা নিয়ে তাঁর পড়াশোনা ছিল না। তবে মৃত্যুর সময় যদি নিয়ে যাওয়া যায়, কোন দুটি বই নিয়ে যাবেন? জীবদ্দশায় এ প্রশ্নে সৌমিত্র বলেছিলেন, ‘গীতবিতান’ ও ‘মহাভারত’-এর নাম। পরে নিজেই একটি বইয়ের নাম বদলে নেন। ‘মহাভারত’-এর বদলে নিতে চেয়েছিলেন সুকুমার রায়ের ‘আবোল-তাবোল’। রবীন্দ্রনাথ আর সুকুমার রায়কে নিয়েই পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন পরপারে।


বিভাগ : বিনোদন


এই বিভাগের আরও