২০২০ সালে ১৮ হাজার ১০৪ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু

০৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ এএম


২০২০ সালে ১৮ হাজার ১০৪ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু
ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সারাদেশে ২০২০ সালে ১৮ হাজার ১০৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ। ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৫৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পদের। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ১৮ হাজার ১০৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কাগজে-কলমে এতে মোট ১৫৯ কোটি ২৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এর আগের বছর ২০১৯ সালে ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানী হয় ১৮৪ জনের। এর মধ্যে ১২৫ জন ছিল ঢাকার, ৪৪ জন চট্টগ্রামের, ছয়জন বরিশালের, রংপুরের চারজন, সিলেটের চারজন এবং ময়মনসিংহের একজন। এসব অগ্নিকাণ্ডে সম্পদের ক্ষতি হয় ৩৩০ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার টাকার।

ফায়ার সার্ভিস ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে, তাতে দেখা যায় মার্চে দেশে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকায়।

২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি মসজিদে। মসজিদের ভেতর জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণের পর দগ্ধ হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর তিতাসের কয়েকজন কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে বরখাস্ত করা হয়।

এ ছাড়াও গত ২৭ মে গুলশান ২-এর ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫ জন মারা যান। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট কাজ করে ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বস্তির সব ঘর পুড়ে যায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডের একটি পাঁচতলা ভবনের গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডে শিশুসহ নিহত হন তিনজন।

ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অগ্নিকাণ্ডের খবর ছিল বছরজুড়ে। আগুনের ঘটনায় হাজারো সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অসংখ্য পরিবার হারিয়েছেন পরিবারের উপার্যনক্ষম মানুষটিকে।

অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের পেছনে ছিল মানুষের অসচেতনতা, ঘনবসতি ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এমনই দাবি করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে অগ্নিকাণ্ডের ২৪টি কারণের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো- চুলার আগুন, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ, সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো, খোলা বাতির ব্যবহার, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা, যন্ত্রাংশের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, মিস ফায়ার, চিমনি, রাসায়নিক বিক্রিয়া, বাজি পোড়ানো ইত্যাদি।

৮ বিভাগের মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে কম ঘটে সিলেটে। নতুন গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগেও অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা সিলেটের চেয়ে বেশি।

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘সারা দেশের তুলনায় ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর পেছনে মূল তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত মানুষের অসচেতনতা, দ্বিতীয়ত ঘনবসতি এবং তৃতীয়ত অপরিকল্পিত নগরায়ণ। দেখা গেছে, মানুষ অসচেতনভাবে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখছে কিংবা দুর্বল বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবহার করছে।’

রাজধানীর নীমতলি, চুড়িহাট্টা কিংবা এফআর টাওয়ারের মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চলতি বছরে ঘটেনি। কিন্তু বছরজুড়ে রাজধানীসহ সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যানস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ‘ভবন নির্মাণ, নগরায়ণসহ সবকিছুতেই নিয়ম মানতে হবে। অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়াও এ নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’

অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ফায়ার সার্ভিস আগের চেয়ে আরও সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসে আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত হয়েছে। কর্মীরাও আগের চেয়ে প্রশিক্ষিত।’ (সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন)


বিভাগ : বাংলাদেশ