নরসিংদীতে বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বায়ার হাউজের প্রতারণা, জেলহাজতে তিনজন

২৪ নভেম্বর ২০২০, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫০ এএম


নরসিংদীতে বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বায়ার হাউজের প্রতারণা, জেলহাজতে তিনজন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর বিভিন্ন বস্ত্রকারখানা থেকে রপ্তানী করা পোশাকের টাকা পরিশোধ না করে প্রতারণার অভিযোগে ৩ বায়ারকে (বিদেশি ক্রেতাদের মনোনীত প্রতিনিধি) জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে ওই তিন বায়ারকে নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।


আসামীরা হলো- বাগেরহাট জেলার বড় গজালিয়ার মৃত সামছুর রহমানের ছেলে ও এম.এম.এস সোর্সিং এর ম্যানেজিং পার্টনার মতিউর রহমান (৪৫), নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার উচখালীর মৃত মুক্তার মিজির ছেলে ও এম.এম.এস সোর্সিং এর মার্চেন্টডাইজিং ম্যানেজার হাফিজ উদ্দিন মিজি (৪২) এবং ঢাকা বনানীর মৃত নজির উদ্দিনের ছেলে ও কোয়ান্টাম লজিস্টিক লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হুদা তুহিন (৪৫)। মামলার অপর আসামী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মুনাজতপুর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে ও কোয়ান্টাম লজিস্টিক লি. এর কর্মকর্তা জি এম আরিফুর রহমান (৩২) পলাতক।


পুলিশ ও মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী জানান, গত ৩ নভেম্বর নরসিংদীর মাধবদীস্থ জজ ভূঞা গ্রুপের রপ্তানীমুখী বস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফে-ম্যাক্স সুয়েটার কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে চারজন বায়ারের বিরুদ্ধে নরসিংদীর আদালতে প্রতারণার অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মাধবদী থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলা গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মাধবদী থানা পুলিশ। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে ২ জনকে তিনদিনের রিমান্ড ও একজনকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আবার তাদের নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. রকিবুল ইসলামের আদালতে তোলা হয়।

 


মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, কোয়ান্টাম লজিস্টিক লি. নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে নরসিংদীর মাধবদী এলাকার ফে-ম্যাক্স সুয়েটার কম্পোজিট লি. চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৮৮ হাজার ৮৬০ পিস বিভিন্ন সাইজের লেডিস সোয়েটার রপ্তানীর অর্ডার পায়। পরে অর্ডার অনুযায়ী সব পোশাক রপ্তানী করা হয়। রপ্তানী করা পোশাকের মোট মূল্য মূল্য ৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৬০ মার্কিন ডলার। এরমধ্যে কয়েক ধাপে ওই প্রতিষ্ঠান পোশাকের মূল্য বাবদ ২ লক্ষ ৯১ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার পরিশোধ করলেও ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৪৫ মার্কিন ডলার বকেয়া থেকে যায়। পরে বকেয়া ডলার পরিশোধ না করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে বিতর্কিত ওই প্রতিষ্ঠানটি (কোয়ান্টাম লজিস্টিক লি.)। এক পর্যায়ে পাওনা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায় কোয়ান্টাম লজিস্টিক লি.। এরই প্রেক্ষিতে ওই চারজন বায়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ফে-ম্যাক্স সুয়েটার কম্পোজিট লি. কর্তৃপক্ষ।


মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী হারুন অর রশিদ জানান, মামলার আসামীরা বায়ার অর্থাৎ বিদেশী ক্রেতার মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গার ৩২টি বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২২ কোটি টাকার পোশাক নিয়ে টাকা পরিশোধ না করে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


ফে-ম্যাক্স সুয়েটার কম্পোজিট লিমিটেডের জিএম শরিফুল ইসলাম জানান, কোয়ান্টাম লজিস্টিক লি. নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি মালমাল বুঝে পাওয়ার পরই আমাদের ব্যাংক একাউন্টে পাওনা টাকা পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওই টাকা আমাদেরকে না দিয়ে তারা নিজেরাই আত্মসাৎ করে। তারা বায়িং হাউজ হয়েও সহযোগিতার পরিবর্তে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা প্রতারণা করে যাচ্ছে। আমরা এমন প্রতারণার প্রতিকার চাই।


মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছিল মাধবদী থানার পুলিশ। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে দুইজনের তিন দিনের করে রিমান্ড ও একজনকে জেলহাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাই আমরা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ দুপুরে আবার আদালতে তোলা হলে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।



এই বিভাগের আরও