উপজেলা নির্বাচন: রায়পুরায় নৌকা প্রতিকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আ’লীগের এমপি রাজু

০৫ মার্চ ২০১৯, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম


উপজেলা নির্বাচন: রায়পুরায় নৌকা প্রতিকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আ’লীগের এমপি রাজু
রায়পুরায় এমপি রাজুর উপস্থিতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
আসন্ন রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিজের ছেলেকে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মনোনীত করতে ব্যর্থ হয়ে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন দলের সাংসদ রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলীয় নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী।

নেতাকর্মী ও দলীয় প্রার্থীর অভিযোগ, সাংসদ রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু নিজ পুত্র রাজিব আহমেদ পার্থকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী করতে ব্যর্থ হয়ে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেছেন। বিতর্কিত এক ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে দাড় করিয়ে তার পক্ষে নির্বাচনী সভা সমাবেশ করে প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আব্দুস সাদেক নামে তার ব্যক্তিগত পছন্দের ওই প্রার্থীকে সাথে নিয়ে গত রবিবার (৩ মার্চ) সকালে রায়পুরার রাজু অডিটোরিয়ামে প্রকাশ্যে সভা করেছেন এমপি রাজু।

সাংসদ রাজুর উপস্থিতিতে সমাবেশে বক্তৃতাকালে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল সাদেক বলেন, আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। তার নির্দেশেই আমি প্রার্থী হয়েছি। বিগত ৩০ বছর ধরে এমপি রাজুর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, টেস্ট রিলিফ, কাবিখাসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রমই আমি নিজে পরিচালনা করেছি। এমপি রাজু সকল উন্নয়ন কাজে আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন।
এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে এমপির পরামর্শে রায়পুরা উপজেলা পরিষদকে একটি গতিশীল পরিষদে পরিণত করবো।
আব্দুস সাদেক আরও বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫০/৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে এমপি রাজু মিজান চৌধুরীকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়ে ছিলেন। সেই মিজান চৌধুরী এমপি রাজুর সাথে বেঈমানি করেছেন।

রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এমপি রাজু তার পুত্র রাজিব আহমেদ পার্থকে উপজেলা পরিষদে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রস্তাব করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পত্র পাঠায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের রায়পুরার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেন। এতে এমপি রাজু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। তিনি তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতা প্রদর্শনের জন্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তার ব্যক্তিগত পছন্দের প্রার্থী বহু বিতর্কিত আব্দুস সাদেককে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। এ নিয়ে তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেক সাধারণ নেতাকর্মী ধারণা করছেন এবার উপজেলা নির্বাচন নিয়ে রায়পুরায় আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘাত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে, অতীতেও কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে একইভাবে নিজের পছন্দের লোককে প্রার্থী করে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করেন এমপি রাজু। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় নেতাকর্মীদেরকে উপদলে বিভক্ত করছেন। ধারাবাহিকভাবে এমপি রাজুর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে রায়পুরার চরাঞ্চলে আওয়ামীলীগ দলীয়ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এসবের জেরে বছরের পর বছর ধরে চরাঞ্চলে টেঁটা ও বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। রায়পুরা চরাঞ্চলের এই অশান্তির জন্য সেখানকার মানুষ এমপি রাজু এবং এবার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সাদেককেই দায়ী করে আসছিলেন।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মেছবাহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী কোন মন্ত্রী অথবা এমপি কোন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। অথবা কোন নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত থাকতে পারেন না। যদি কোন প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 



এই বিভাগের আরও