পলাশে সার কারখানার নির্গত গ্যাসের বিষাক্ততায় হুমকির মুখে পরিবেশ

৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৫:৩৯ পিএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ০১:১৭ পিএম


পলাশে সার কারখানার নির্গত গ্যাসের বিষাক্ততায় হুমকির মুখে পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
পলাশ উপজেলায় পলাশ ও ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানার বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্রতায় হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার খানেপুরবাসী।
স্থানীয়রা জানান, বিসিআইসি নিয়ন্ত্রণাধীন পলাশ ও ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা দুটি থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্য এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিষাক্ত বাতাস ছড়িয়ে পড়েছে পাশ্ববর্তী খানেপুর এলাকায়। ফলে গাছপালা ও ফসলসহ এলাকার জীব বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গৃহপালিত পশুপাখি ও মৎস্য খামারের মাছ মরে ভেসে উঠছে। মানুষসহ গরু-ছাগল আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছেন। গ্যাসের বিষাক্ত ঝাঁঝে এখানকার গাছের পাতাগুলো হলদে বর্ণে পরিণত হয়েছে।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পলাশ ও ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানার উত্তর পাশে ১৮ একর জমিতে রয়েছে একটি লেগুন (পুকুর)। এ লেগুনের ১৫ থেকে ২০ গজ দূরে খানেপুর গ্রামের অবস্থান। সার কারখানার পাশ দিয়ে খানেপুর গ্রামের রাস্তায় ঢুকলেই নাকে লাগবে অ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র গন্ধ। এলাকাটিতে নতুন কেউ গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় এ পরিবেশে পাঁচ মিনিট অবস্থান করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ অবস্থায় খানেপুরবাসী বছরের পর বছর অ্যামোনিয়ার বিষাক্ত তীব্রতার মধ্যে বসবাস করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের।


লেগুনের পাশে বসবাসকারী আলতাফ হোসেন জানান, সম্প্রতি সার কারখানার বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে তার পোলট্রি ফার্মের আট শতাধিক মুরগি মরে গেছে। তাছাড়া গ্রামের প্রতিটি পুকুরের মাছ মরে গিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। সার কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার এসব বিষয়ে অভিযোগ করেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।


দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও জানান, সবচেয়ে বড় দুঃখজনক হলো, খানেপুর গ্রামে কোনো লোক আত্মীয়তা করতে চায় না। কোনো ছেলেকে বিয়ে করানো বা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অভিভাবকরা তাদের বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। ঝাঁঝালো গন্ধ সহ্য করতে না পেরে এলাকার অনেক বাসিন্দা অন্যত্র চলে গেছেন।


ফৌজি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলে যাওয়া আসার সময় গ্যাসে তাদের চোখ-মুখ জ্বালা করে।


খানেপুর গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাসকারী আজিজ মিয়া বলেন, নিজেরা যদি ঠিকঠাকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারতাম, তাহলেও বাপ-দাদার ভিটা ছাইরা যাইতাম না। ১৯৯৯ সালেও এ ধরণের গ্যাসে এলাকায় ব্যাপক তি হয়। তখন কারখানা কর্তৃপ খানেপুর গ্রামের প্রায় একশ' পরিবারের মধ্যে সাত লাখ টাকা তিপূরণ দেয়। সার কারখানা কর্তৃপ তিপূরণ দিয়ে গ্রামবাসীকে স্থায়ী সমাধান করার আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে গ্রামবাসীর সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। এ বছর শীতে আবার গ্যাস ছাড়ার ফলে এলাকায় লোকজন নানামুখী সমস্যায় পড়ছেন। গ্রামবাসী তিপূরণ চায় না, চায় স্থায়ী সমাধান।


এক হাজার ৪২২ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ঘোড়াশাল ও ৩০০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা দুটির ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাস অতিমাত্রায় গত মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) মধ্যরাতে শীতলক্ষ্যা নদীতে ছাড়া হয়। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠে।


এ ব্যাপারে ঘোড়াশাল সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, যেহেতু কেমিক্যাল কারখানা, সেহেতু কিছুটা তিগ্রস্ত তো হতে হচ্ছেই। কারখানার গ্যাস পানির সঙ্গে নির্গত করা হয়, যার কারণে তা বেশি বাতাসে ছড়ানোর সুযোগ নেই। যেটুকু ছড়ায় সেটুকুর প্রভাবতো পড়েই। এটা আস্তে আস্তে সবার সয়ে যায়। সম্প্রতি মধ্যরাতে নদীতে গ্যাসের প্রভাবে মাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি শুনে সকালে কারখানার পাইপ ও অ্যামোনিয়ার মাত্রা পরিক্ষা করা হয় বলেও জানান তিনি।



এই বিভাগের আরও