ইটভাটার আগুনে পুড়ছে শ্রমিক পরিবারের শিশুদের ভবিষ্যৎ

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০১ পিএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৬ এএম


ইটভাটার আগুনে পুড়ছে শ্রমিক পরিবারের শিশুদের ভবিষ্যৎ

নরসিংদী জেলাজুড়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ইটভাটায় কর্মরত হাজারো শ্রমিকদের শিশু সন্তানরা। অস্থায়ীভাবে বসবাস, নিকটে বিদ্যালয় না থাকা ও দারিদ্রতাসহ নানা কারনে সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। ইটাভাটার বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।


সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ১৮০টি ইটভাটা। এসব ইটভাটায় বছরের ছয়মাস অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন হাজারো শ্রমিক। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও জেলার ১৮০টি ইভাটার বস্তিতে প্রায় ১০ হাজার শিশুর বসবাস বলে ধারণা এলাকাবাসীর। ইটভাটার বস্তি ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এসব শ্রমিকরা।

দিনরাত ইটভাটায় কাজ করে এসব শ্রমিক বাবা-মায়েরা ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর চেষ্টা করলেও ইটভাটার আগুনে ভবিষ্যৎ পুড়ছে শিশুদের। জন্মের পর থেকে নুন্ম্যতম স্বাস্থ্য সেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে এই শ্রমিকদের শিশু সন্তানরা।

বাবা-মা দু’জনই দিনভর শ্রমিক হিসেবে কাজ করার কারনে সন্তানদের প্রতি যতœবান হতে পারেন না শ্রমিকরা। ফলে শিক্ষার আলো না পেয়ে দিনরাত ইটভাটার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘুরে ফিরে সময় কাটছে শিশুদের। অস্থায়ীভাবে বসবাস, নিকটবর্তী স্থানে বিদ্যালয় না থাকা ও দারিদ্রতাসহ নানা কারনে সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শ্রমিক পরিবারের শিশুরা।


শুধু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়া-ই শেষ নয়। কোন কোন ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে শিশুরা। এতে ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে ঘটছে দূর্ঘটনা। দিনরাত ভাটার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারনে নানা রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে এসব শিশু।


বিভিন্ন ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকরা বলছেন, অভাবের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে নরসিংদীর বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করেন তারা। দারিদ্রতার কারনে তাদের শিশু সন্তানদের পড়ালেখা ও চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না।

মজুরি কম হওয়ায় ইটভাটার বস্তিতেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হয় তাদের। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বঞ্চিত এসব শিশুদের বিষয়ে ভালভাবে খোঁজ নেয়ার মত সময় নেই শ্রমিকদের হাতে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ না করলে পেটের ভাত জুটে না। তবে সুযোগ সুবিধা পেলে এসব শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে চান অভিভাবকরা।


তারা আরও বলেন, পেটের ভাত যোগাব, না সন্তানের লেখাপড়া করাবো? কোন পিতামাতা সন্তানের মঙ্গল চায় না বলেন? আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া কীভাবে করাবো?


অভাবের তাড়নায় বছরের ছয়মাস ভাটায় থেকে কাজ করি। বাকী ছয়মাস বাড়ীতে থাকি। যাযাবরের মতো থাকি এভাবেতো আর লেখাপড়া সম্ভব না। এভাবে কী কোন স্কুলে ভর্তি করাবে?


ইটভাটা এলাকায় যদি লেখাপড়ার সুযোগ থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের সন্তানরা নিজে নিজে স্কুলে যেতে পারতো। দূর হওয়াতে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।


নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় একটি মাত্র শ্রমজীবী শিশুদের বিদ্যালয় রয়েছে, তাও আবার সদরে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইটভাটার শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের সচেতন করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইটভাটা মালিক ও শিশুদের অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশ করা হবে। এতে এসব শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাবে।



এই বিভাগের আরও